চিনিশপুর কালীমন্দির
ইতিহাস: সাধক রামপ্রসাদ কালীমাকে রামপ্রসাধের নিজ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। মাকালীর শর্ত ছিল যে, তুই আগে হাটবি, আমি তোর পিছু পিছু আসব। তখন সাধক মা কালীকে প্রশ্ন করল? মা, তুমি যে আমার পিছু পিছু আসবে আমি কি করে বুঝব। তখন মা সাধককে বলল: আমার পায়ে নুপুর থাকবে নুপুরের আওয়াজ শুনতে পাবি। তখনই বুঝবি,আমি তোর সাথে আছি।অতএব, এখানে আরেকটি শর্ত আছে যে, তুই পিছনে ফিরে তাকাবি না, আর যেই স্থানে গিয়ে পিছনে ফিরে তাকাবি আমাকে সেখান থেকে আর তোর বাড়িতে নিতে পারবি না। হাটতে হাটতে চিনিশপুর উপরোক্ত স্থানে আসার পর সাধক রামপ্রসাদ ব্রাহ্মণ মাকালীর পায়ের নুপুরের আওয়াজ হঠাত শুনতে না পেয়ে- সাধক রামপ্রসাদ মনে মনে ভাবতে লাগল, মা কি চলিয়া গিয়াছে? ক্ষানীক্ষণ রামপ্রসাদ অপেক্ষা করে পিছনে ফিরে তাকাল! তথন পিছন থেকে মা দক্ষিণাকালী বললেন, সাধক তুই তো আমাকে তোর বাড়িতে নিয়ে যেতে পারলি না। কারন তুই শর্ত ভঙ্গ করেছিস। মাকালীর কথা শুনার পর সাধক রামপ্রসাদ খুব কান্নাকাটি করতে লাগল এবং বলতে ছিল আমি আপনার নুপুরের আওয়াজ শুনতে না পেয়ে মনে করেছিলাম আপনি পিছন থেকে চলে গিয়েছিলেন। তখন মাকালী বুঝিয়ে বললেন, দেখতে পারছিস না এখানে বালুর চর বালু ভিতর পায়ের নুপুর আটকে গিয়েছিল তাই নুপুরের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না।
তারপর সাধক রামপ্রসাদ ভেবে দেখল যে, মা কালীর শর্ত অনুযায়ী মাকে আর নেওয়া যাবে না।তখন সাধকমাকে বলল- আমি এখন কি করতে পারি, তখন মা বলল যে, আমি এখানেই থাকব। তখন সাধক মাকে এখানেই প্রতিষ্ঠা করে মাকে সনাতন ধর্ম অনুযায়ী পূজা করতে আরম্ভ করল। তখন থেকেই এখানে মা দক্ষিণা কালীর মন্দির প্রতিষ্ঠিত হলো এবং এই মন্দিরে হাজার ভক্তের সমাগোম, মাকে পূজা এবং আরাধনা করতে আরম্ভ করলেন। এই ভাবেই চলতে লাগল মায়ের পূজা এবং ভক্তদের প্রার্থণা।এই মন্দিরে প্রতি বৈশাখ ও জৈষ্ঠ্য মাসের অমাবস্যায় মেলা উদযাপন করেন এবং পাঠা বলি দেওয়া হয়। বর্তমানে কালি মন্দিরের পূজারী: শ্রী তাপস ঘোষ স্বামী। হিন্দু সম্প্রাদায়ে চিনিশপুর গ্রামে প্রায় ১০০ জন লোক বসবাস করেন। এরপর থেকে সাধক রামপ্রসাদের শুরু হলো মা কালীর ধ্যান, পূজা ও ভক্তদের সেবা।
আর একদিন সাধক রামপ্রসাদ মার জন্য মন্দির নিমার্ণ করতেছিল। এই মূহুর্তে এক শাখা বিক্রেতা শাখা নিয়ে যাচ্ছিল। তখন মাকালী সাধারণ এক মেয়ে রুপ ধারণ করে। শাখারোকে ডেকে আনে বলল, আমি শাখা পড়ব আমাকে শাখা দিন। তখন মাকালী শাখা পড়ল।
শাখারো বলল: মা আমার শাখার দামটা দিন?
মা বলল: ঐ যে মন্দির নিমার্ন করছেন তিনি হচ্ছেন আমার বাবা, উনাকে বলেন, মন্দিরের কোণায় এক ভান্ডের মধ্যে পয়সা আছে আপনার মেয়ে শাখা কিনেছে শাখার দামটা আপনাকে দিতে বলছে। তখন সাধক হতাশ হয়ে বলতে লাগলেন শাখা পড়ার মত উপযুক্ত মেয়েতো আমার নেই, বলতে বলতে মন্দিরে ঢুকে মন্দিরের কোণার ভান্ডর থেকে পয়সা দিয়ে শাখারোকে বিদায় দিলেন। তখন থেকে সাধক রামপ্রসাদ কাদতে আরম্ভ করলেন যে, মা আমি এত বড় দুর্ভাগা যে আমি তোমার আজও দর্শন পেলাম না। কোথাকার কে শাখারো তোমার হাতে নিজে শাখা পড়িয়ে দিয়েছে আর আমি যুগ যুগ ধরে কাদতেছি তোমার কৃপা এবং দর্শন পাওয়ার আশায়। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসল তখনও সাধক কাদতে কাদতে বলতে লাগল- মা তুমি যে শাখা হাতে পড়েছ অনন্ত সে শাখাটাই আমাকে দেখাও। এই বলে সাধক কাদতে কাদতে ঘুমিয়ে গেল। ঘুমের ঘরে স্বপ্নে মা কালী আদেশ করল যে, কাল সকালে মন্দির সংলগ্ন পুকুরের ঘাটে আসিছ আমি তোকে শাখা দেখাবো। তখন ভোর হওয়ার পর সাধক রামপ্রসাদ দৌড়ে পুকুর ঘাটে যান এবং দুহাত জোড়াত করে মাকালীকে ভক্তি দেন এবং চোখ খুলে দেখেন পুকুরের জলের উপর শাখা পড়া হাত দুটি জলের উপরে উঠানো আছে। তখনই সাধক রামপ্রসাদ মায়ের হাতের শাখা দেখতে পেল। তখন মা মা বলে কেদে পুকুরের জলে ঝাপ দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস